ধারাবাহিক হিমু সিরিজ

দুপুরের কড়া রোদের ভেতর খালি পায়ে হেটে চলেছে লোকটি। গায়ে একটি ময়লা পকেট বিহীন হলুদ পাঞ্জাবী। মুখে খোচ খোচা দাড়ি। হ্যা, ঠিক ধরেছেন। ইনি হচ্ছেন আমাদের সেই হিমু। যাকে আমরা হিমালয় নামেও চিনি। কি মনে করে সে নিজেকে? এভাবে খালি পায়ে হাটা হাটি করলেই কি মহাপুরুষ হওয়া যায়? জিবনটা হচ্ছে একটা মায়া। মহাপুরুষ হতে হলে এসকল মায়াই তাকে ছিন্ন করতে হবে। ভরা পূর্নিমার রাতে আকাশে ঐ মস্ত বড় চাঁদটা দেখেও তাকে নির্লিপ্ত থাকতে হবে। তা কি সে পেরেছে? না, তা সে পারে নি। সে ছড়িয়ে পরেছে ছন্নছাড়া জীবনের এক কঠিন মায়ায়। দেশের প্রতি মায়া, দেশের মানুষের প্রতি মায়া তার পিছু ছাড়েনি। ফুটপাতের উপরে পরিশ্রান্ত ঘুমন্ত মানুষগুলোকে দেখলে তার মায়া হয়। সিগনালে দাঁড়িয়ে থাকা বিলাশ বহুল কারগুলোর সামনে যখন পথশিশুরা ফুল বেচতে আসে, তাদের নিঃষ্পাপ চেহারা দেখলে তার মায়া হয়।এ এক জটিল মায়া।

কখনো কি লক্ষ্য করেছেন এমন একজন হিমু আমাদের সকলের মাঝেই বসবাস করছে? হ্যা, আমাদেরও ইচ্ছা করে সমাজের এই কঠিন নিয়ম শৃঙ্খলার বেড়াজাল ভেঙে বেড়িয়ে আসতে। হয়ে যেতে ইচ্ছে করে হিমুর মতই ছন্নছাড়া। ভরা পুর্নিমার রাতে আমাদের প্রিয় মানুষটির হাতটি ধরে তাকিয়ে থাকতে ইচ্ছে করে পুর্নিমায় ঝলমল করা ঐ উজ্বল আকাশের দিকে। এমন সব ছন্নছাড়া মানুষদের নিয়েই আমাদের এই ওয়েব সাইট ছন্নছাড়া।  আপনিও আমন্ত্রিত......

আসুন হয়ে যাই ছন্নছাড়া............

হিমু কথন

বাবা আমার নাম রেখেছিলেন হিমালয়, হিমালয় থেকে হিমু। দুই অক্ষরের ছোট্ট একটা নাম। নামের মধ্যেই ঠান্ডা ঠান্ডা ভাব। বাবা বলেছিলেন, হিমালয় শোন, তুই পথে পথে হাঁটবি। তোর কাজ হল শহর দেখা। আমি আবাক হয়ে বলেছিলাম, শহরে দেখার কি আছে ? ইটের দালান। তিনি অত্যন্ত বিরক্ত হয়ে বলেছিলেন, যে দেখতে পারে সে ইটের দালানেও অনেক কিছু দেখতে পারে। যে দেখতে পারে না তাকে এই পৃথিবীর সবচে সুন্দর দৃশ্যের সামনে দাঁড় করিয়ে দিলেও সে কিছু দেখতে পারে না। তুই শহরের পথে পথে হাঁটবি, রাতে হাঁটবি। অন্ধকারে শহর দেখার মজাই অন্য রকম।
বাবার উপদেশ মেনে নিয়ে আমি প্রায়ই অন্ধকারে শহর দেখতে বের হই। যে রাতে ব্ল্যাক আউট হয়। শহর ঘন অন্ধকারে ডুবে যায়, আমি হলুদ চাদর গায়ে পথে নামি। মনে মনে বলি, হে অন্ধকার নগরী ! তুমি দেখা দাও।
নগরী দেখা দেয় না। আমি অপেক্ষা করি।

...................................................................................................................................................

হিমুর পরিচয় :

ভালো নাম : হিমালয়
ডাক নাম : হিমু
বৈশিষ্ট্য : মুখ ভর্তি দাঁড়ি গোঁফ, পাছায় কালো জন্মদাগ
পোশাক : হলুদ পাঞ্জাবী (পকেট বিহীন)
যা কিছু প্রিয় মোর : জোছনা, বর্ষা, পূর্ণিমার চাঁদ
প্রিয় সঙ্গী : বাদল, RAB-এর ডগ স্কোয়াডের কুকুর "টাইগার"

হিমুর বাবা ছিলেন একজন সাইকোপ্যাথ। হিমুর জন্মের পর তিনি হিমুর মাকে ঠান্ডা মাথায় নিজহাতে খুন করেন- যাতে সে মাতৃস্নেহ না পায়। তার মতে- মাতৃস্নেহ মহাপুরুষ হবার ক্ষেত্রে এক বিশাল বাধা ! হিমু মা ছাড়াই বাবার কাছে লালিত হয় এবং অল্প বয়সেই তার বাবা মারা যান। হিমু তার মামাদের কাছে বড় হয়। তার মামারা সবাই পিশাচ শ্রেণীর (বিস্তারিত জানতে পড়ুন ময়ূরাক্ষী)। মেট্রিক পাস করার পর সে ঢাকায় ফুপুর বাড়ীতে আসে এবং সেখান থেকেই কলেজ ও ভার্সিটির পড়াশোনা শেষ করে। হিমুর কাজ-কর্ম রহস্যময় জগত নিয়ে। সে প্রচণ্ড ঈশ্বরভক্ত। আল্লাহর প্রতি তাঁর রয়েছে অগাধ বিশ্বাস। মানুষকে একটি বিশেষ দিকের প্রতি আলোকপাত করাই তাঁর লক্ষ্য। হিমু কাজ করে "এন্টি লজিক" নিয়ে। এন্টি লজিক হলো লজিকের বিপরীত। হিমু বিশ্বাস করে " বিশ্বাসে মিলায় বস্তু, তর্কে বহুদূর..." ধর্ম আর আধ্যাত্মিকতার অপূর্ব সংমিশ্রণে তৈরী "হিমু" নামের চরিত্রটি। মূলত হুমায়ূন আহমেদের মতে, "হিমু" নামটা এসেছে তাঁর "হুমায়ূন" নাম থেকেই ! হিমুর মতে- তাঁর বাবা তাকে হিমালয় নামেই ডাকতেন। পরে সে নিজেই তাঁর নাম সংক্ষেপে রেখেছে "হিমু" !

কাগজের পাতায় তৈরী একটি চরিত্রের ভেতরেও যে "প্রাণ-সঞ্চার" হতে পারে; কল্পনার একটি চরিত্রও যে রক্ত-মাংসের মানুষে পরিণত হতে পারে তার জ্বলন্ত প্রমাণ হুমায়ূন আহমেদের "হিমু"।

Topic: ছন্নছাড়া

jony01811291005

jony | 10/11/2011

jony

New comment